adds

দিঘা -Digha

                                                                 দিঘা -Digha

           দিঘা নামটি মনে পড়লেই চোখের সামনে ভেসে উঠে সমুদ্রের নীল উত্তাল ঢেউ,  বিস্তীর্ণ বালুয়াড়ি, ঝাউবনের সারি এবং সোনালি বালিতে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন ছোট ছোট সামুদ্রিক প্রাণী আরও কত কি। মাঝে মধ্যে দুদিনের ছুটি পেলেই মনে হয় সমুদ্রের সেই উত্তাল ঢেউগুলো যেন হাত ছানি দিয়ে ডাকছে। সমুদ্রের সেই উত্তাল ঢেউ এর সামনে কিছুক্ষণ বসে থাকলে মনে হয় যেন মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা দুঃখগুলো যেন সেই ঢেউ এর নিচে চাপা পরে যায় মনে যেন আনন্দের দোলা লাগে। 

         আসলে দিঘা ও পুরীর নাম শুনলে অধিকাংশ বাঙ্গালির মনে হয়ত সেই একই অনুভূতির সঞ্চার হয়। আজ সেই দিঘার পুরানো ইতিহাস নিয়ে কিছু কথা-
  কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রেমানন্দ প্রধানের লেখা ‘হিজলিনামা’ বই থেকে জানা যায়, অষ্টাদশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সেটলমেন্টের রেকর্ডে বীরকুল নামে ওড়িশার জলেশ্বর চাকলার অধীনে থাকা একটি পরগনার উল্লেখ ছিল।সেই সময় দিঘা ছিল সমুদ্রের ধারে অবস্থিত সেই বীরকুলপরগনার অন্তর্গত একটি প্রন্তান্ত গ্রাম। তখন সেখানে জনবসতি ছিল নাম মাত্র।  

    ১৭৭৪ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস ভারতের গভর্নর জেনারেল পদে অভিষিক্ত হন। সেই সময় তিনি একটি বিশেষ কাজে ওড়িশায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরার পথে বীরকুল পরগনার মনোরম পরিবেশ তাঁকে বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট করে। তাই ১৭৭৫ সালে হেস্টিংস বীরকুলের মনোরম সমুদ্র সৈকতের প্রাকৃতিক পরিবেশে গ্রীষ্মকালে সময় কাটানো, সমুদ্রস্নান,মাছ ধরা  ইত্যাদি বিনোদনের জন্য একটি বাংলো তৈরি করেন।তাঁর লেখা একটি চিঠিতে দেখা যায় তিনি এই জায়গাটিকে "প্রাচ্যের ব্রাইটন" বলে উল্লেখ করেছিলেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইংরেজ আধিকারিকরা সস্ত্রীক বীরকুলে সময় কাটাতে যেতেন। পরবর্তীকালে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস আর ভূমিক্ষয়ে বীরকুল ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়। এমনকি হেস্টিংসের অবসর বিনোদনের বাংলোটিও পরে সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।ওয়ারেন হেস্টিংস এর আন্তরিক চেষ্টার পর ও বীরকুল সৈকত শহরে পরিণত হতে পারে নি। 
                 তারপর কেটে যায় অনেকগুলো বছর।১৮৫২ সালে কাঁথি মহকুমা গঠনের সঙ্গে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য কাঁথি, খেজুরি, রামনগর, এগরা, পটাশপুর আর ভগবানপুর এই ছ’টি থানায় বিভক্ত করা হয়। তখন অতীতের বীরকুল পরগনা কাঁথি মহকুমার রামনগর থানা এলাকার অন্তর্ভূক্ত হয় । দিঘা তখনও ছিল বীরকুল পরগনার পরিচয়হীন দুর্গম গ্রাম।  ১৯২৩ সালে কলকাতার জুয়েলারি ও ঘড়ি তৈরির প্রসিদ্ধ হ্যামিলটন অ্যান্ড কোম্পানির মালিক জন ফ্র্যাঙ্ক স্নেইথ পুরনো কাগজপত্র ঘেঁটে ও রামনগরের বালিসাইয়ের বাসিন্দা এক খদ্দেরের কাছ থেকে বীরকুলে দিঘা সৈকতের কথা জানতে পেরে পারেন। জন ফ্র্যাঙ্ক স্নেইথ ছিলেন একজন ভ্রমণ প্রিয় মানুষ। তিনি প্রথমে গাড়ি করে বেলদা থেকে কনটাই এর ডাকবাংলোতে তারপর সেখান থেকে হাতির পিঠে করে দিঘা গেলেন। তিনি বীরকুলে এসে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে সমুদ্রপাড়ে ১১.৫ একর জমি লিজ নিয়ে ১৯৩০ সালে সেই জমির উপর তৈরি করলেন রানসউইক হাউস। তিনি তখন ৬ মাস সেখানে থকতেন আর ৬ মাস থাকতেন শিলং এ। 
           সেই হিসেবে ওয়ারেন হেস্টিংস কে যদি দিঘার আবিষ্কর্তা বলা হয় তবে জন ফ্র্যাঙ্ক স্নেইথ হলেন সেখানকার প্রথম অধিবাসী। তবে দিঘা নামকরণ কি করে হল তা নিয়ে এখনো কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না, অনেকে মনে করেন দিঘার মোহনায় বঙ্গোপসাগরের সাথে যে নদী টির সংযোগ রয়েছে তাকে সেখানকার বাসিন্দারা দিঘি বলত সেই থেকেই হয়ত দিঘা। 

       দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দিঘাকে সৈকত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জন ফ্র্যাঙ্ক স্নেইথ আবেদন জানান তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের কাছে। ধীরে ধীরে তৈরি হয় সৈকতাবাস, জল সরবরাহ-সহ নানা ব্যবস্থা। ১৯৬২ সালে বিধানচন্দ্র রায়ের মায়ের নামে ‘অঘোরকামিনী’ স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হয়। জন ফ্র্যাঙ্ক স্নেইথ পযর্টকরা যাতে সরাসরি সড়ক পথে দিঘায় আসতে পারেন তার জন্য কলকাতা-দিঘা সড়ক তৈরির জন্য রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
       ফ্র্যাঙ্ক স্নেইথ ১৯৬৪ সালে মারা যান। তাঁকে রানসউইক বাংলোতেই কবর দেওয়া হয়।১৯৭৪ সালে রাজ্য বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে বাংলোটি  বিক্রি হয়ে যায়। প্রতি বছর ১৮ই  ডিসেম্বর রানসউইক হাউসে স্নেইথের সমাধিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে স্মরণ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

           
দিঘা -Digha


 English Translation

   As soon as the name Digha comes to our mind, the blue waves of the sea float in front of the eyes, the vast sands, the rows of Zhaoban and the various small marine creatures hidden in the golden sand. Sometimes when I get a two-day break, it seems as if the waves of the sea is calling me . If you sit in front of that wave of the sea for a while, it seems as if the sorrows hidden in the depths of your mind are pressed under that wave and you feel as if you are shaking with joy.

    In fact, hearing the names of Digha and Puri, most Bengalis may feel the same feeling. Today let's talk about the old history of Digha-

   It is known from the book 'Hijlinama' written by Premananda Pradhan,  principal of Kanthi Prabhatkumar College, that in the records of the British settlement in the 18th century, there was a pargana called Birkul under Jaleshwar Chakla in Orissa. At that time, Digha was a remote village on the coast of Birkulpargana.

      In 1774 Warren Hastings was inaugurated Governor General of India. At that time he went to Orissa on a special mission. On his way back from there, the beautiful environment of Birkul Pargana attracted him in a special way. So in 1775, Hastings built a bungalow in Birkul to enjoy the summer, swimming, fishing, etc. in the natural environment near sea beach. The English officers of the East India Company used to go to Birkul to spend time with his wife. Later, due to tidal surge and land erosion, Birkul was reduced to rubble. Even Hastings' bungalow later disappeared into the sea. After the sincere efforts of Warren Hastings, Birkul could not become a beach.
    
    Then many years passed. With the formation of Kanthi subdivision in 1852, Kanthi, Khejuri, Ramnagar, Egra, Potashpur and Bhagwanpur were divided into six police stations for administrative convenience. The former Birkul Pargana Kanthi subdivision was then included in the Ramnagar Thana area. Digha was still an unidentified remote village of Birkul Pargana. John Frank Snaith, the owner of Hamilton & Co., a famous jewelery and watch maker in Calcutta in 1923, searched for old papers and learned about Digha beach in Birkul from a customer in Balisai, Ramnagar. John Frank Snaith was a travel-loving man. He first drove from Belda to Contai's  bungalow and then on to Digha on an elephant's back. He came to Birkul and became fascinated by the beauty of the beach. He leased 11.5 acres of land on the beach and built Runswick House on that land in 1930. He then stayed there for 6 months and stayed in Shillong for 6 months.
          As such, if Warren Hastings is called the inventor of Digha, then John Frank Snaith is the first inhabitant.However, no exact information is yet available as to how Digha was named. Many people think that the river which is connected to the Bay of Bengal at the mouth of Digha is called Dighi by the locals. Digha may have been named since then.

    After India became independent, John Frank Snaith appealed to the then Chief Minister Bidhan Chandra Roy to develop Digha as a beach city. Gradually, Saikatabas, water supply and other facilities were built. In 1972, 'Aghorkamini' health center was built in the name of Bidhan Chandra Roy's mother.John Frank Snaith requested the state government to build a Kolkata-Digha road so that tourists can reach Digha directly by road.

      Frank Snaith died in 1964. He was buried in the Runswick Bungalow. In 1974, the bungalow was sold to the State Electricity Department.Every year on December 18, locals light candles in memory of Frank Snaith at Runswick House.

Post a Comment

0 Comments